Header Ads

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন




বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন


জার্মানির একটি ছোট শহর উলমে এক সম্ভ্রান্ত ইহুদি পরিবারে আইনস্টাইনের জন্ম (১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ)।
পিতা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। মাঝে মাঝেই ছেলেকে নানা খেলনা এনে দিতেন। শিশু আইনস্টাইনের বিচিত্র চরিত্রকে সেই দিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি তার অভিভাবক, তার শিক্ষকদের। স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযোগ আসত পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী, আনমনা। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন।
শুধু একমাত্র সঙ্গী তার মা। তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানা সুর শোনেন। আর বেহালায় সেই সুর তুলে নেন। এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের আজীবন কালের সাথী। বাবাকে বড় একটা কাছে পেতেন না আইনস্টাইন। নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন।
সেই আনন্দে ভরা দিনগুলোর মাঝে হঠাৎ কালো ঘনিয়ে এল। সেই শৈশবেই আইনস্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ত স্বাদ। তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে ক্যাথলিক ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতে হতো।
স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিষাদ হয়ে যায় তার কাছে। দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সের মধ্যে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, নিউটনের রচনা পড়ে শেষ করে ফেললেন। বিজ্ঞান, দর্শনের সাথে পড়তেন গ্যেটে, শিলার, শেক্সপিয়ার। অবসর সময়ে বেহালায় বিটোফোন, মোতসার্টের সুর তুলতেন। এরাই ছিল তার সঙ্গী বন্ধু, তাঁর জগৎ।
এই সময় বাবার ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন। তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সকলে মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু সেখানে একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন।
সুইজারল্যান্ডের একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। প্রথমবার তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করলেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছে। আইনস্টাইন অনুভব করলেন সংসারের দায়-দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতেই হবে। শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করার জন্য তিনি পদার্থবিদ্যা ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা আরম্ভ করলেন। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে শিক্ষকতার জন্য বিভিন্ন স্কুলে দরখাস্ত করতে আরম্ভ করলেন। অনেকের চেয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা তার বেশি ছিল কিন্তু কোথাও চাকরি পেলেন না। কারণ তার অপরাধ তিনি ইহুদি।
নিরুপায় আইনস্টাইন খরচ চালানোর প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করলেন। এই সময় আইনস্টাইন তার স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেককে বিয়ে করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। মিলেভা শুধু আইনস্টাইনের স্ত্রী ছিলেন না, প্রকৃত অর্থেই তার জীবনসঙ্গী ছিলেন।
আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন শিক্ষকতার কাজ পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। একটি অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার। তার এই গোপন সাধনার কথা শুধু মিলেভাকে বলেছিলেন, ‘আমি এই বিশ্বপ্রকৃতির স্থান ও সময় নিয়ে গবেষণা করছি।’
আইনস্টাইনের এই গবেষণায় ছিল না কোনো ল্যাবরেটরি, ছিল না কোনো যন্ত্রপাতি। তার একমাত্র অবলম্বন ছিল খাতা-কলম আর তার অসাধারণ চিন্তাশক্তি। অবশেষে শেষ হলো তার গবেষণা। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বার্লিনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকাAnnalen der physik-এর অফিসে।
এই পত্রিকায় ১৯০১ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত আইনস্টাইন পাঁচটি রচনা প্রকাশ করলেন। এসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আইনস্টাইনের নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কোনো সুরাহা হলো না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নিলেন।
একদিকে অফিসের কাজ, মিলেভার স্নেহভরা ভালোবাসা, অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অবশেষে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হলো তার চারটি রচনা-প্রথমটি আলোর গঠন ও শক্তি সম্পর্কে। দ্বিতীয়টি অ্যাটমের আকৃতি-প্রকৃতি। তৃতীয়টি ব্রাউনিয়াম মুভমেন্টের ক্রমবিকাশের তত্ত্ব। চতুর্থটি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। যা বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত করল। এই আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ বা অন্য কিছুর তুলনা। আইনস্টাইন বললেন আমরা যখন কোনো সময় বা স্থান পরিমাপ করি তখন আমাদের অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তিনি বলেছেন আলোক বিশ্বজগৎ, কাল এবং মাত্রা আপেক্ষিক।
আমাদের মহাবিশ্বে একটি মাত্র গতি আছে যা আপেক্ষিক নয়, অন্য কোনো গতির সঙ্গেও এর তুলনা হয় না-এই গতি হচ্ছে আলোকের গতি। এই গতি কখনোই পরিবর্তন হয় না। এই সময় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আইনস্টাইনকে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য। ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। এরই সাথে পেটেন্ট অফিসের চাকরিও করেন।
বিজ্ঞান জগতে ক্রমশই আইনস্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ছিল। বিজ্ঞানী কেলভিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এখানে তাকে অনারারি ডক্টরেট উপাধি দেয়া হলো। এরপর তার ডাক এল জার্মানির সলসবার্গ কনফারেন্স থেকে। এখানে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সামনে তার প্রবন্ধ পড়লেন আইনস্টাইন। তিনি বললেন, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এমন কোনো এক তত্ত্ব পাব যা আলোর কণাতত্ত্ব এবং তরঙ্গ তত্ত্বকে সময়ের বাঁধনে বাঁধতে পারবে।
আইনস্টাইনের এই উক্তির জবাবে বিজ্ঞানী প্লাঙ্ক বললেন, আইনস্টাইন যা চিন্তা করছেন সেই পর্যায়ে চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি। এর উত্তরে আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ঊ=সপ২ উৎপত্তিটি আলোচনা করে বোঝালেন তিনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন তা কতখানি সত্য।
১৯০৮ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার পদ সৃষ্টি করা হলো। রাজনৈতিক মহলের চাপে এই পদে মনোনীত করা হলো আইনস্টাইনের সহপাঠী ফ্রেডরিখ এডলারকে। ফ্রেডরিক নতুন পদে যোগ দিয়েই জানতে পারলেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের পরিবর্তে তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ নেই। তার তুলনায় আমার জ্ঞান নেহাতই নগণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উপলব্ধি করতে পারলেন ফ্রেডরিখের কথার গুরুত্ব। অবশেষে ১৯০৯ সালে আইনস্টাইন তার পেটেন্ট অফিসের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করলেন। জুরিখে এসে বাসা ভাড়া করলেন।
আইনস্টাইন আর কেরানি নন, প্রফেসর। কিন্তু মাইনে আগে পেতেন ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক, এখনো তাই। তবে লেকচার ফি বাবদ সামান্য কিছু বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সুযোগে বহু মানুষের সাথে, গুণী বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় হয়। এমন সময় ডাক এল জার্মানির প্রাগ থেকে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে তাকে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। মাইনে আগের চেয়ে বেশি। তাছাড়া প্রাগে গবেষণার জন্য পাবেন বিশাল লাইব্রেরি। ১৯১১ সালে সপরিবারে প্রাগে এলেন আইনস্টাইন। কয়েক মাস আগে তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়েছে।
অবশেষে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এল আইনস্টাইনের। ১৯১২ সালে প্রাগ ত্যাগ করে এলেন জুরিখে। এখানে তখন ছুটি কাটাতে এসেছিলেন মাদাম কুরি, সঙ্গে দুই কন্যা। দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে গড়ে উঠল মধুর বন্ধুত্ব। পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে মাদাম কুরি ব্যাখ্যা করেন তেজস্ক্রিয়তা আর আইনস্টাইন বলেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। একদিন নিজের তত্ত্বের কথা বলতে বলতে এত তন্ময় হয়ে পড়েছিলেন পথের ধারে গর্তের মধ্যে গড়িয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। তাই দেখে মেরি কুরির দুই মেয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল। গর্ত থেকে উঠে তাদের সঙ্গে আইনস্টাইনও হাসিতে যোগ দিলেন।
সেই সময় জার্মানিতে কাইজারের পৃষ্ঠপোষকতায় বার্লিন শহরে গড়ে উঠেছে কাইজার তিলহেলম ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানের এতবড় গবেষণাগার পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে যোগ দিয়েছেন প্লাঙ্ক, নার্নস্ট, হারের আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু আইনস্টাইন না থাকলে যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সবকিছু। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। সবকিছু দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। শুধু গবেষণাগার নয়, বহু বিজ্ঞানীকেও কাছে পাওয়া যাবে। একসাথে কাজ করা যাবে। তাকে মাইনে দেয়া হলো বর্তমান মাইনের দ্বিগুণ।
১৯১৪ সালে বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। যখন আইনস্টাইন বার্লিন ছেড়েছিলেন তখন তিনি পনেরো বছরের কিশোর। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর ফিরে এলেন নিজের শহরে। চেনাজানা পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হলো। সবচেয়ে ভালো লাগল দূরসম্পর্কিত বোন কাছে ফিরে এসেছে। এলসার সান্নিধ্য বরাবরই মুগ্ধ করত আইনস্টাইনকে। অল্পদিনেই অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
ছেলেবেলা থেকেই যেখানে সেখানে অঙ্ক করার অভ্যাস ছিল আইনস্টাইনের। কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো টেবিলের ওপর। টেবিল ভর্তি হয়ে গেলে মাটিতে বসে চেয়ারের উপরেই অঙ্ক কষে চলেছেন।
গবেষণায় যতই মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন আইনস্টাইন, সংসারের প্রতি ততই উদাসীন হয়ে পড়ছিলেন। স্ত্রী মিলেভার সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমশই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন মিলেভা। দুই ছেলেকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে গেলেন। কয়েক মাস কেটে গেল আর ফিরলেন না মিলেভা।
এদিকে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলো। বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়লেন যুদ্ধে। আইনস্টাইন এই যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ব্যথিত হলেন। এরই সাথে সংসারের একাকিত্ব, স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন আইনস্টাইন।
এই সময় অসুস্থ আইনস্টাইনের পাশে এসে দাঁড়ালেন এলসা। এলসার অক্লান্ত সেবা-যত্নে ক্রমশই সুস্থ হয়ে উঠলেন আইনস্টাইন। তিনি স্থির করলেন মিলেভার সাথে আর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। অবশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হলো। কাইজারের পতন ঘটল। প্রতিষ্ঠা হলো নতুন জার্মান রিপাবলিকের। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তখনো প্রমাণিত হয়নি। এগিয়ে এলেন ইংরেজ বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলা হলো। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেল আলো বাঁকে।
বিজ্ঞানীরা উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন। মানুষ তার জ্ঞানের সীমানাকে অতিক্রম করতে চলেছে। অবশেষে ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে ঘোষণা করা হলো সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার, আলো বেঁকে যায়। এই বাঁকের নিয়ম নিউটনের তত্ত্বে নেই। আলোর বাঁকের মাপ আছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সূত্রে।
পরিহাসপ্রিয় আইনস্টাইন তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কৌতুক করে বললেন, আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।
একদিন এক তরুণ সাংবাদিক বললেন, আপনি সংক্ষেপে বলুন আপেক্ষিক তত্ত্বটা কী?
আইনস্টাইন কৌতুক করে বললেন, যখন একজন লোক কোনো সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে তখন তার মনে হয় যে যেন এক মিনিট বসে আছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উনানের ধারে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তার মনে হয় সে যেন এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। এই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।

আপেক্ষিক তত্ত্বে জটিলতার দুর্বোধ্যতার কারণে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল। একদিন এক সুন্দরী তরুণী তার প্রেমিকের সাথে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দিল। পরদিন যখন মেয়েটি ফাদারের কাছে গিয়েছে ফাদার তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া।
মেয়েটি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করল, কোন বিষয়? ফাদার বললেন তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল। হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।
আমেরিকার এক বিখ্যাত সুরকার জর্জ তার এক বন্ধুকে বললেন, একজন মানুষ কুড়ি বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেন, আর ভাবলে অবাক হতে হয় সেই চিন্তাটুকুকে প্রকাশ করলেন মাত্র তিন পাতায়। বন্ধুটি জবাব দিল নিশ্চয়ই খুব ছোট অক্ষরে ছাপা হয়েছিল।
আইনস্টাইন আমেরিকায় গিয়েছেন, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরল। একজন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি এক কথায় আপেক্ষিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে পারেন? আইনস্টাইন জবাব দিলেন, না।
আজকাল মেয়েরা কেন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা করছে? আইনস্টাইন হাসতে হাসতে বললেন, মেয়েরা সব সময়ই নতুন কিছু পছন্দ করে-এই বছরের নতুন জিনিস হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।

অবশেষে এল সাধক বিজ্ঞানীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। কিছুদিন ধরেই নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার কথা চিন্তা করছিল। কিন্তু সংশয় দেখা গেল স্বয়ং নোবেলের ঘোষণার মধ্যে। তিনি বলে গিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাবেন আবিষ্কারক আর সেই আবিষ্কার যেন মানুষের কল্যাণে লাগে। আইনস্টাইনের বেলায় বিতর্ক দেখা দিল তার আপেক্ষিক তত্ত্ব যুগান্তকারী হলেও প্রত্যক্ষভাবে তা মানুষের কোনো কাজে লাগবে না।
তখন তার ফটো ইলেকট্রিক অ্যাফেক্ট বা আলোক তড়িৎ ফলকে সরাসরি আবিষ্কার হিসেবে বলা সম্ভব এবং এর প্রত্যক্ষ ব্যবহারও হচ্ছে তাই ঘোষণা করা হলোService to the theory of Physics, especially for the Law of the Photo Electric Effect.আইনস্টাইন তার প্রথমা স্ত্রী মিলেভার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত অনুসারে নোবেল পুরস্কারের পুরো টাকাটা তাকে পাঠিয়ে দেন।
আমেরিকায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য বারবার ডাক আসছিল। অবশেষে ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, সেখানে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন। শুধু আমেরিকা নয়, যখন যে দেশেই যান সেখানেই পান সম্মান আর ভালোবাসা।
এদিকে স্বদেশ জার্মানি ক্রমশই আইনস্টাইনের কাছে পরবাস হয়ে উঠেছিল। একদিকে তার সাফল্য স্বীকৃতিকে কিছু বিজ্ঞানী ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখতে থাকে, অন্যদিকে হিটলারের আবির্ভাবে দেশজুড়ে এক জাতীয়তাবাদের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে একদল মানুষ। ইহুদিরা ক্রমশই ঘৃণিত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন জার্মানিতে থাকা তার পক্ষে মোটেই নিরাপদ নয়। কিন্তু কোথায় যাবেন? আহ্বান আসে নানা দেশ থেকে। অবশেষে স্থির করলেন আমেরিকার প্রিন্সটানে যাবেন।
জার্মানি থেকে ইহুদি বিতাড়ন শুরু হয়ে যায়। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন এবার তারও যাওয়ার পালা। প্রথমে গেলেন ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে ১৯৩৪ সালের ৭ জুলাই রওনা হলেন আমেরিকায়। তখন তার বয়স পঞ্চান্ন বছর।
প্রিন্সটনের কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গুপ্তঘাতকের দল যে সাগর পেরিয়ে আমেরিকায় এসে পৌঁছবে না তাই বা কে বলতে পারে। তাই তাকে গোপন জায়গায় রাখা হলো। সেই বাড়ির ঠিকানা কাউকে জানানো হলো না। এভাবে থাকতে তার আর ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে ল্যাবরেটরি থেকে এসে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় প্রিন্সটনের ডিরেকটরের বাড়িতে ফোন এল দয়া করে যদি আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বরটা জানান। আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বর কাউকে জানানো হবে না বলে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন ডিরেকটার।
খানিক পরে আবার ফোন বেজে উঠল। আমি আইনস্টাইন বলছি, বাড়ির নম্বর আর রাস্তা দুটোই ভুলে গিয়েছি। যদি দয়া করে বলে দেন। এ এক বিচিত্র ঘটনা, যে মানুষটি নিজের ঘরের ঠিকানা মনে রাখতে পারেন না, তিনি বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যের ঠিকানা খুঁজে বের করেন।
প্রকৃতপক্ষে জীবনের উত্তরপর্বে এসে আইনস্টাইন হয়ে উঠেছিলেন গৃহ সন্ন্যাসী। বড়দের চেয়ে শিশুরাই তার প্রিয়। তাদের মধ্যে গেলে সবকিছু ভুলে যান। শিশুদের কাছে কল্পনার ক্রিসমাস বুড়ো। পরনে কোট নেই, টাই নেই, জ্যাকেট নেই। ঢলঢলে প্যান্ট আর গলা আঁটা সোয়েটার, মাথায় বড় বড় চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঝ্যাটা গোঁফ। দাড়ি কামাতে অর্ধেক দিন ভুলে যান। যখন মনে পড়ে গায়ে মাখা সাবানটা গালে ঘষে দাড়ি কেটে নেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে কী ব্যাপার গায়ে মাখা সাবান দিয়ে দাড়ি কাটা, আইনস্টাইন জবাব দিতেন, দুরকম সাবান ব্যবহার করে কী লাভ?
শুধু নির্যাতিত ইহুদিদের সপক্ষে নয়, তিনি ক্রমশই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করছে, দলমত নির্বিশেষে তিনি তাদের সমর্থন করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একদিন মানুষ এই ধ্বংসের উন্মাদনা ভুলে এক হবেই। আর একত্বতার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পাবে তার ধর্মকে।
আইনস্টাইনের কাছে এই ধর্মীয় চেতনা প্রচলিত কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্ম মানবতারই এক মূর্ত প্রকাশ। বিজ্ঞান আর ধর্মে কোনো প্রভেদ নেই, প্রভেদ শুধু দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিজ্ঞান শুধু ‘কি’ তার উত্তর দিতে পারে ‘কেন’ বা ‘কী হওয়া উচিত’ সে উত্তর দেয়ার ক্ষমতা নেই। অপরদিকে ধর্ম শুধু মানুষের কাজ আর চিন্তার মূল্যায়ন করতে পারে মাত্র। সে হয়তো মানব জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ বলে দেয় বিজ্ঞান।…তাই ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।
মানবতাবাদী আইনস্টাইন একদিকে শান্তির জন্য সংগ্রাম করছিলেন, অন্যদিকে প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে একের পর এক তত্ত্ব আবিষ্কার করছিলেন। এই সময় তিনি প্রধানত অভিকর্ষ ও বিদ্যুৎ চৌম্বকক্ষেত্রের মিলন সাধনের প্রচেষ্টায় অতিবাহিত করেন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশের পথে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কিন্তু এই তত্ত্বের সম্ভাব্যতাভিত্তিক চরিত্রে তার সম্পূর্ণ আস্থা ছিল না।
১৯৩৬ সালে হঠাৎ স্ত্রী এলসা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সুদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এলসা ছিলেন আইনস্টাইনের যোগ্য সহধর্মিণী, তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী।আইনস্টাইন সব বুঝতে পারেন কিন্তু অসহায়ের মতো তিনি শুধু চেয়ে থাকেন। অবশেষে ১৯৩৬ সালে চিরদিনের মতো প্রিয়তম আইনস্টাইনকে ছেড়ে চলে গেলেন এলসা। এই মানসিক আঘাতে সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেন আইনস্টাইন।
এই সময় পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এই শক্তির ভয়াবহতা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন। পরীক্ষায় জানা গেল পারমাণবিক শক্তি সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ধাতু হলো ইউরেনিয়াম। আর এই ইউরেনিয়াম তখন একমাত্র পাওয়া যায় কঙ্গো উপত্যকায়। কঙ্গো, বেলজিয়ামের অধিকারভুক্ত। বিজ্ঞানী মহল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল যদি জার্মানদের হাতে এই ইউরেনিয়াম পড়ে তাহলে তারা পরমাণু বোমা বানাতে মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব করবে না। গোপনে সংবাদ পাওয়া যায় জার্মান বিজ্ঞানীরা নাকি জোর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
আইনস্টাইন উপলব্ধি করলেন তার সমীকরণ প্রমাণিত হতে চলছে। সামান্য ভরের রূপান্তরের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে অপরিমেয় শক্তি। আইনস্টাইন লিখেছেন, ‘আমার জীবনকালে এই শক্তি পাওয়া যাবে ভাবতে পারিনি’।
এদিকে জার্মান বাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করলেন যুদ্ধ জয় করতে গেলে অ্যাটম বোমা তৈরি করা দরকার এবং তা জার্মানির আগেই তৈরি করতে হবে। সকলে সমবেতভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে আবেদন জানাল। যদিও এই আবেদনপত্রে সই করেছিলেন আইনস্টাইন, আমেরিকায় পরমাণু বোমা তৈরির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই তিনি জড়িত ছিলেন না।
শেষ দিকে তিনি চেয়েছিলেন এই গবেষণা বন্ধ হোক। তিনি বিজ্ঞানী মাক্স বোর্নকে বলেন, পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আবেদনপত্রে আমার সই করাটাই সবচেয়ে বড় ভুল। জাপানে অ্যাটম বোমা ফেলার পর তার বিধ্বংসী রূপ দেখে বিচলিত আইনস্টাইন লিখেছেন, ‘পারমাণবিক শক্তি মানব জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আশীর্বাদ হয়ে দেখা যাবে-সে রকম মনে হয় না। এই শক্তি মানবজাতির প্রকৃতই ভয়ের কারণ-হয়তো পরোক্ষভাবে তা ভালোই করবে। ভয় পেয়ে মানবজাতি তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা চালু করবে। ভয় ছাড়া মানুষ বোধহয় কখনোই শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।’
১৯৫০ সালে প্রকাশিত হলো তার নতুন তত্ত্বA generalised theory of Gravitation। মহাকর্ষের সর্বজনীন তত্ত্ব। এত জটিল সেই তত্ত্ব, খুব কম সংখ্যক মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারলেন।
যখন বিজ্ঞানীরা তাকে তার এই নতুন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে বললেন তিনি সকৌতুক বললেন, কুড়ি বছর পর এর আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠেছে নতুন ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য।
আইনস্টাইন জানালেন প্রকৃতির তত্ত্ব কিছু বুঝলেও মানুষ রাজনীতির কিছুই বোঝেন না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির পদ শুধু শোভাবর্ধনের জন্য। শোভা হলেও তার বিবেক যা মানতে পারবে না তাকে তিনি কখনোই সমর্থন করতে পারবেন না।
জীবন শেষ হয়ে আসছিল, এই সময়ে ইংরেজ মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেলের অনুরোধে বিশ্ব শান্তির জন্য খসড়া লিখতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল তার জীবন শেষ হলো। তার ইচ্ছা অনুসারে মৃতদেহটা পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হলো। শোনা যায় পরীক্ষার জন্য তার ব্রেইন কোনো গবেষণাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে সম্বন্ধে কেউই আর কোনো কথা প্রকাশ করেনি।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর জীবনী
১৮ এপ্রিল আলবার্ট আইনস্টাইনের মৃত্যুদিন। বাঙালিরা যেমন পঁচিশে বৈশাখ বাইশে শ্রাবণ পালন করেন ঠিক সেরকম বা কাছাকাছি আড়ম্বরে আইনস্টাইনের জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালিত হয় না কোথাও। শুধু আইনস্টাইন কেন- কোন বিজ্ঞানীই তেমন ভাবে স্মর্তব্য নন আমাদের সংস্কৃতিতে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সুফল (কিংবা কুফল) ভোগ করতে জানি সবাই কিন্তু বিজ্ঞানীদের প্রয়োজনীয় সম্মান কিংবা ভালোবাসা দিতে আমরা জানি না। আমরা কেউ তেমনভাবে ভেবেও দেখি না যে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে আমরা কী কী সুবিধা পাচ্ছি, লেজার রশ্মি আমাদের কোন্‌ কাজে লাগছে কিংবা E=mc2 প্রয়োগ করে কী বিপুল শক্তির অধিকারী আমরা হয়ে উঠছি। জাতি হিসেবে আমরা আবেগ-প্রবণ। ধর্ম-কবিতা-গান-গল্প-নাটক-সিনেমা সর্বোপরি রাজনীতির যত চর্চা আমরা করি বা পিন্ডি চটকাই তার সহস্রাংশ সময়ও বিজ্ঞানচর্চার জন্য রাখি না। বিজ্ঞানচর্চা নিজেরা করিনা তো বটেই – অন্য কেউ করলেও আমরা সহ্য করি না। বিশেষ করে আধুনিক বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরাতন ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেই তেড়ে মারতে আসার লোকের অভাব নেই আমাদের বাংলাদেশে। রাষ্ট্রযন্ত্র আধুনিকতার মুখোশ পরে থাকে – কিন্তু মুখশ্রী বদলাতে রাজি নয় কোন ভাবেই। তাই ব্লগাররা যখন বৈজ্ঞানিক যুক্তির ধারালো চাকুতে ব্যবচ্ছেদ করে শত বছরের পুরনো সংস্কার – মোল্লারা ধর্মের নামে তলোয়ার চালায় তাদের উপর, রাষ্ট্র যোগ দেয় সাথে। এর মধ্যেও শত প্রতিকূলতা দুহাতে ঠেলে বিজ্ঞানচর্চা করে যাচ্ছেন অনেকেই। আইনস্টাইন সারাজীবন উৎসাহ দিয়েছেন এসব লড়াকু বিজ্ঞান-সৈনিকদের। আমার বিশ্বাস আমাদের দেশেও বিজ্ঞান-সৈনিকের সংখ্যা বাড়বে দিনে দিনে, একদিন আমাদের দেশেও গড়ে উঠবে আইনস্টাইনের মত বিজ্ঞানী। আইনস্টাইনের জীবন থেকে নেয়া আজকের লেখাটি বাংলার বিজ্ঞান-সেনাদের জন্য।
০১ জীবনবৃত্তান্ত
আইনস্টাইনের জীবনবৃত্তান্ত বহুল প্রচারিত। আইনস্টাইনই একমাত্র বিজ্ঞানী যাঁর এক বা একাধিক জীবনী পৃথিবীর প্রায় সবগুলো ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। (আইনস্টাইনের একটি বাংলা জীবনী মুক্তমনায় আছে এখানে)। তবে তাঁর প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক জীবনবৃত্তান্ত রচিত হয়েছিল ১৮৯৬ সালে তাঁর সতের বছর বয়সে তাঁর নিজের হাতেই। আইনস্টাইন তখন সুইজারল্যান্ডের আরাউ অঞ্চলের আগাউ স্কুল থেকে ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা তার জীবনবৃত্তান্ত ছিল এরকম :

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ উল্‌ম শহরে আমার জন্ম। এক বছর বয়সে আমি মিউনিখে আসি। ১৮৯৪-৯৫ সালের শীতকাল পর্যন্ত আমি মিউনিখেই ছিলাম। সেখানেই আমার ইলিমেন্টারি স্কুল, তারপর লুটপোল্ড সেকেন্ডারি স্কুলে ক্লাস সেভেনে উঠেছিলাম, কিন্তু শেষ করা হয়নি। তার আগেই আমি মিলানে চলে গিয়েছিলাম এবং সেখানেই ছিলাম গত বছরের শরৎকাল পর্যন্ত। নিজে নিজেই পড়াশোনা করেছি মিলানে। তারপর গত বছর শরৎকাল শেষে আমি আরাউ এর ক্যান্টোনাল স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছি। করছি। বর্তমানে আমি গ্রাজুয়েশান পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করা।
অনেক বছর পর ১৯৩২ সালে আইনস্টাইন আরেকবার নিজের হাতে লিখেছিলেন নিজের জীবনবৃত্তান্ত। তখন তিনি অনেক খ্যাতিমান। দশ বছর হয়ে গেছে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞান- জগতে তাঁর নাম-ডাক। ১৮৫টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এসময় গ্যোয়েটে’র মৃত্যু শতবার্ষিকী উপলক্ষে জার্মান একাডেমি অব সায়েন্টিস্ট আইনস্টাইনকে একাডেমির মেম্বারশিপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইনস্টাইনও সম্মত হয়েছেন। কিন্তু সম্মত হয়েই পড়লেন বিপদে। একাডেমির চেয়ারম্যান ইয়া লম্বা এক ফরম ধরিয়ে দিলেন আইনস্টাইনকে। প্রায় পুরো জীবনবৃত্তান্ত লিখতে হলো ওই ফরম পূরণ করতে গিয়ে। ধৈর্য সহকারে আইনস্টাইন লিখলেন সব – জন্ম, স্কুল, প্যাটেন্ট অফিসের টেকনিক্যাল কাজ, উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা, প্রফেশনাল সোসাইটির মেম্বারশিপ সব লিখলেন। কিন্তু নোবেল পুরষ্কার পাবার কথা উল্লেখ করেন নি কোথাও। তবে কি নোবেল পুরষ্কারের গুরুত্ব তাঁর কাছে খুব একটা ছিল না? নাকি তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন নোবেল প্রাপ্তির কথা? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা যায় নি কখনো।
০২ জীবনের লক্ষ্য
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, জীবনের লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়ে আমরা অনেকেই রচনা লিখেছি স্কুলে। আইনস্টাইনকেও লিখতে হয়েছিল। সেই ষোল বছর বয়সেই আইনস্টাইন জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন এভাবেঃ

যদি স্কুল গ্রাজুয়েশান পরীক্ষা পাশ করতে পারি, জুরিখের ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হবো। সেখানে চার বছর পড়াশোনা করবো গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের তত্ত্বীয় শাখার অধ্যাপক হিসেবে দেখতে চাই। তার পেছনে অবশ্য কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান ও গাণিতিক ভাবনাগুলো অনেক বেশি স্বাধীনভাবে করা যায়। তার পরের কারণ হলো ব্যবহারিক বিজ্ঞানে আমার দক্ষতার অভাব। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক পেশায় এক ধরণের স্বাধীনতা আছে যা আমাকে ভীষণভাবে আগ্রহী করে তুলেছে সে পেশার প্রতি।
কিন্তু অনেক বছর অনেক কষ্টের পরে আইনস্টাইন যখন প্রফেসর হলেন দেখলেন যেরকম স্বাধীনতা তিনি আশা করেছিলেন সেরকম স্বাধীনতা নেই সেখানে। একাডেমিক জগতেও আছে পদোন্নতির ইঁদুর-দৌড়, ‘পাবলিশ অর পেরিশ’ এর খড়গ। ১৯২৭ সালে বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে ম্যাক্স প্ল্যাংকের প্রফেসর পদ খালি হলে সেই পদ লাভের জন্য প্রফেসরদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তখন আইনস্টাইন তাঁর বন্ধু পল ইরেনফেস্টকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিলেন : – আমি ভাই ওসবে নেই। বড় বড় মস্তিষ্কের প্রতিযোগিতায় যাবার আর কোন ইচ্ছেই আমার নেই। এরকম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আমার কাছে অর্থ বা ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ করার মতই হীন মনে হয়। প্যাটেন্ট অফিসে কাজ করার সময় পদোন্নতির জন্য দু’বার দরখাস্ত করেছিলেন আইনস্টাইন। একবারও সফল হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর আর কখনো পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন নি কোথাও। গবেষণা-পত্র প্রকাশের প্রচলিত পদ্ধতিও পছন্দ করেন নি তিনি। আমেরিকায় যাবার পর ফিজিক্যাল রিভিউতে একটা পেপার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন রিভিউয়াররা তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন কোন্‌ প্রসঙ্গ কীভাবে লেখা উচিত – আইনস্টাইন বিরক্ত হলেন। তিনি আর কখনো কোন গবেষণা-পত্র প্রকাশ করেন নি ফিজিক্যাল রিভিউ।
০৩ প্রথম সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি
১৯০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা’র ৩৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একশ জন উদীয়মান প্রতিভাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইনস্টাইনের নামও সেই একশ’ জনের তালিকায় ছিল। আইনস্টাইন এসবের কিছুই জানতেন না। তাঁর প্রধান আবিষ্কারের পেপারগুলো যদিও প্রকাশিত হয়েছে ১৯০৫ সালে কিন্তু তখনো ওগুলো তেমন আলোড়ন তৈরি করে নি। আইনস্টাইন তখনো প্যাটেন্ট অফিসেই কাজ করছেন। এসময় একটা বড় খামে অনেক কাগজ-পত্র এসে পৌঁছালো তাঁর অফিসে। আইনস্টাইন খাম খুলে দেখেন বেশ সুদৃশ্য টাইপে ছাপানো বেশ কিছু কাগজপত্র। তাঁর মনে হলো ল্যাটিন ভাষায় লেখা কোন বিজ্ঞাপন। অপ্রয়োজনীয় মনে করে তিনি না পড়েই কাগজ-পত্র সহ খামটি ফেলে দিলেন বাতিল কাগজের স্তুপে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে আইনস্টাইনের বন্ধু লুসিয়েন কাফানের সাথে যোগাযোগ করলো। লুসিয়েন জরুরি ভিত্তিতে আইনস্টাইনকে ডেকে নিয়ে গেলেন জেনেভায় নির্দিষ্ট দিনে, কিন্তু ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির ব্যাপারে কিছুই জানাননি। জেনেভায় গিয়ে আইনস্টাইন দেখলেন জুরিখ ইউনিভার্সিটির অনেক প্রফেসর সেখানে উপস্থিত। জানা গেলো জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সম্মান-সূচক ডিগ্রি দিচ্ছেন। আইনস্টাইনও যে ডিগ্রি পাচ্ছেন তা তাঁরা জানেন, কিন্তু আইনস্টাইন নিজে তা জানেন না। যখন জানলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ সমাবর্তনের একাডেমিক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক পোশাক তার নেই। তিনি ভাবলেন কেটে পড়বেন, ডিগ্রি নেবেন না। কিন্তু তাঁর বন্ধু ও প্রফেসররা তা হতে দিলেন না। আইনস্টাইন শোভাযাত্রায় অংশ নিলেন তাঁর আটপৌরে কুচকানো কোট আর খড়ের টুপি পরে। পুরো সমাবর্তনে আইনস্টাইনই ছিলেন একমাত্র অনানুষ্ঠানিক। আরো মজার বিষয় হলো – আইনস্টাইনের এই প্রথম সম্মান-সূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদে তাঁর নামের বানান ছিল ভুল। প্যাঁচানো অক্ষরের ফরাসি ভাষায় তাঁর নাম লেখা ছিল ‘আলবার্ট টাইনস্টাইন’।

আইনস্টাইন জীবনে অসংখ্য সম্মাননা, পুরষ্কার, সনদ-পত্র পেয়েছেন। কিন্তু একটি মাত্র সনদ ছাড়া আর কোন সনদই তিনি বাঁধিয়ে রাখেন নি বা প্রদর্শন করেন নি। সবগুলো সম্মাননা সনদই তিনি ফেলে রাখতেন ঘরের এক কোণে, অনেকটা লুকিয়ে। নোবেল পুরষ্কারের সনদও লুকিয়ে ছিল সেই নিভৃত কোণে। যে সনদটি তিনি তাঁর অফিসের দেয়ালে বাঁধিয়ে রেখেছিলেন তা ছিলো ১৯৩৬ সালে বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি যে ডিপ্লোমা সনদটি তাঁকে পাঠিয়েছিল। এই সনদটি পেয়ে তিনি এত খুশি হয়েছিলেন যে তাঁর উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটিকে লেখা তাঁর ধন্যবাদ পত্রে ঃ “বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি যে আমাকে মনে রেখেছে তার জন্য আমি যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছি তা বোঝানোর ভাষা আমার নেই। এই সনদটি মনে হচ্ছে আমার অনেক দিন আগে ফেলে আসা যৌবনের স্মৃতি। মনে হচ্ছে আমি যেন ফিরে যাচ্ছি আমার যৌবনের সেইসব বিকেলগুলোতে”। আইনস্টাইন তখন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কিন্তু মন যে পড়ে আছে ইউরোপে যেখানে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংগ্রাম, সাফল্য।
০৪ বিজ্ঞান ঈশ্বরের দান!
যে কোন বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ঈশ্বর-বিশ্বাসীরা শুরুতে ‘ঈশ্বর-বিরোধী’ কাজকর্ম বলে অপপ্রচার চালিয়ে বাধাগ্রস্ত করে তুলতে সচেষ্ট হয়। তাতে ব্যর্থ হবার পর উল্টোগীত গাইতে শুরু করে এই বলে যে এসব আবিষ্কারের কথা ধর্ম-গ্রন্থগুলোতে কত আগে থেকেই গ্রন্থিত হয়ে আছে। এসব আবিষ্কার তো ওখান থেকেই টুকলিফাই করা। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে এরকম কচলানো শুরু হয়েছিল আইনস্টাইনের জীবদ্দশাতেই। আইনস্টাইন প্রিন্সটনের এডভান্সড রিসার্চ সেন্টারে অধিষ্ঠিত হবার পর মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন সবার কাছে। প্রতিদিন শত শত চিঠি আসতে থাকে তাঁর কাছে। কত রকম আলোচনা, সমালোচনা, আবদার, প্রশ্ন, অনুরোধ, ভালোবাসা, ঘৃণা সেসব প্রশ্ন জুড়ে। আমেরিকান ইহুদিরা প্রচারে লেগে গেলেন যে আইনস্টাইন তাঁদেরই লোক। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির ওপর যে তাঁদের ধর্মের বিরাট প্রভাব আছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য রাবাইরা উঠেপড়ে লাগলেন। শিকাগোর এক রাবাই “দি রিলিজিয়াস ইমপ্লিক্যাশান্‌স অব দি থিওরি অব রিলেটিভিটি” শিরোনামে এক লেকচার তৈরি করে ফেললেন। তাতে আইনস্টাইনের স্বীকৃতি লাভ করার জন্য এই রাবাই আইনস্টাইনকে চিঠি লিখে জানালেন তাঁর লেকচারের বিষয়ে। ধর্মের
স্বার্থে বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যায় আইনস্টাইন ভীষণ বিরক্ত হতেন। ১৯৩৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি রাবাইকে চিঠি লিখে জানালেন “আমি বিশ্বাস করি না যে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মূল ধারণার কোন অংশই ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দাবি করা যায়। কারণ ধর্মের ধারণা বিজ্ঞানের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যৌক্তিক পৃথিবীতে শুধুমাত্র সাধারণ যুক্তির ধাপগুলো সম্পন্ন করেই এক কাজের সাথে অন্য কাজের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, তাতে ধর্মকে টেনে আনার দরকার হয় না”।

০৫ ভাগ্যবান আইনস্টাইন
আইনস্টাইনের ৫০তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠিয়েছেন সিগমন্ড ফ্রয়েড। কার্ডে ফ্রয়েড আইনস্টাইনকে সম্বোধন করেছেন ‘ইউ লাকি ওয়ান’ বলে। আইনস্টাইন বুঝতে পারছিলেন না ফ্রয়েডের মত খ্যাতিমান মানুষ কেন তাঁকে ভাগ্যবান বলে মনে করবেন? ফ্রয়েডকে চিঠি লিখলেন আইনস্টাইন – “মহোদয়, আমাকে মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনি আমার ভাগ্যের উপর এত জোর দিচ্ছেন কেন? আপনি যেখান এত মানুষের মনের খবর জানতে পারেন, সমগ্র মানবজাতি যেখানে আপনাকে মনে রাখছে – সেখানে আপনার তুলনায় আমি কীভাবে ভাগ্যবান হই”? উত্তরে ফ্রয়েড লিখলেন – “পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের গভীর ধারণা নেই তারা কখনো সাহস পাবে না তোমার কাজের সমালোচনা করার, অথচ আমাকে দেখো – মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে যারা কিছুই জানে না তারাও আমার কাজের বড় সমালোচক। এক্ষেত্রে তুমি ভাগ্যবান নও”?

“আলবার্ট আইনস্টাইন” এর জীবনের ৩০ টি মজার ঘটনা
আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।

১. আইনস্টাইন বিশ্বখ্যাত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য। কিন্তু কে কী ভাবত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে? জার্মান বা ফরাসীরা? ১৯৩০-এর দশকে সরবোনে (Sorbonne) বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ বিষয়ে বলেন, ‘যদি আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হয়, তবে জার্মানি আমাকে জার্মান হিসেবে দাবি করবে। আর ফ্রান্স বলবে যে আমি পুরো বিশ্বের নাগরিক। কিন্তু যদি তত্ত্বটা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে ফ্রান্স বলবে, আমি একজন জার্মান এবং জার্মানি বলবে আমি হলাম ইহুদি।’
২. একবার এক অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি একটু সহজ করে আপনার তত্ত্বটা আমাদের বোঝাবেন?’ আইনস্টাইন তখন এই গল্পটা শোনালেন। আমি একবার বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। বন্ধুটি ছিল অন্ধ। আমি বললাম, দুধ পানকরতে ইচ্ছা করছে। ‘দুধ?’ বন্ধুটি বলল, ‘পান করা বুঝি, কিন্তু দুধ কী জিনিস?’ ‘একটা সাদা তরল পদার্থ।’ বললাম আমি। ‘তরল আমি বুঝি, কিন্তু সাদা জিনিসটা কী?’ ‘বকের পালকের রং।’ ‘পালক আমি বুঝি, কিন্তু বক কী?’ ‘ঘাড় কুঁজো বা বাঁকানো ঘাড়ের এক পাখি।’ ‘ঘাড় সে তো বুঝি। কিন্তু এই কুঁজো কথাটার মানে কী?’ এরপর আর ধৈর্য থাকে, বলুন! আমি তার হাতটা ধরে এক ঝটকায় টানটান করলাম। বললাম, ‘এটা এখন একদম সোজা, তাই না। তারপর ধরো, কনুই বরাবর এটা ভেঙে দিলাম। এবার তোমার হাতটা যেমন আছে সেটাকেই কুঁজো বা বাঁকানো বলে, বুঝলে?’ ‘আহ্!’ অন্ধ বন্ধু বলল, ‘এবার বুঝেছি, দুধ বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ।’
৩. একবার এক ছাত্র আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করল, ‘গত বছর পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন পড়েছিল, এবারের পরীক্ষায়ও ঠিকঠিক ওই সব প্রশ্নই পড়েছে।’ ‘ঠিক বলেছ।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘কিন্তু এ বছরের উত্তরগুলো আগেরবারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা!’
৪. আইনস্টাইনকে প্রাচীন গণিতের ইতিহাসবিদ অটো নিউগেব্যুর বলেছেন, ‘কিংবদন্তি’। কিন্তু এই কিংবদন্তি মানুষটি তুলনামূলক দেরিতে কথা বলতে শেখেন। ফলে তাঁর মা-বাবা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তো, একদিন রাতে খাবার টেবিলে সবাই আছেন। আইনস্টাইনও। হঠাৎ তিনি চিত্কার করে বললেন, ‘এই স্যুপটা খুবই গরম।’ উহ্, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মা-বাবা। ছেলের মুখে প্রথম বুলি শুনে তাঁরা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর আগে কেন তুমি কোনো কথা বলোনি?’ জবাবে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ, এর আগে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল!’
৫. মানুষ মাত্রই কি ভুল হয়? নিজের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কী ভাবতেন আইনস্টাইন? ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুল করা বা ভুলে ভরা কাগজগুলো ফেলব!’
৬. অনেকের কাছে অঙ্কের সমার্থক শব্দ আতঙ্ক। তো, একবার ১৫ বছর বয়সী এক তরুণী আইনস্টাইনের কাছে সাহায্য চাইল। গণিতের ওপর বাড়ির কাজ বা হোম ওয়ার্ক সে সঠিকভাবে করতে পারছিল না। তরুণীর কাছে অঙ্ক এমনিতেই আতঙ্কের নাম। আইনস্টাইন ওই তরুণীকে বলেছিলেন,‘গণিতের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করো না। তোমার কাছে গণিত যতটা কঠিন, আমার কাছে গণিত তার চেয়েও কঠিন।’
৭. ১৯২১ সালে ফিলিস্তিন ভ্রমণে বেরিয়েছেন আইনস্টাইন। সেখানে ‘যুব সংঘ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২২ বছর বয়সী এক তরুণী। সমাজের নানা বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন আইনস্টাইন। একবার আইনস্টাইন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, এখানে নারী-পুরুষে সম্পর্ক কেমন?’ এ প্রশ্নশুনে ওই তরুণী লজ্জায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন অধ্যাপক, এখানে কিন্তু একজন পুরুষের একটিই স্ত্রী।’ একটু হেসে তাঁর হাতখানা ধরে আইনস্টাইন বললেন, ‘না, না। আমার প্রশ্নটা ওভাবে নিয়ো না। আমরা পদার্থবিজ্ঞানীরা “সম্পর্ক” কথাটা দিয়ে সহজ কিছুকে বোঝাই। আমি আসলে জানতে চেয়েছি, এখানে কতজন নারী আর কতজন পুরুষ মানুষ।’
৮. এক সহকর্মী আইনস্টাইনের কাছে একবার তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। তখন আইনস্টাইন একটা টেলিফোন বই খুঁজেবের করলেন এবং সে বইতে তাঁর নম্বরটা খুঁজতে লাগলেন। তখন সহকর্মীটি বললেন, ‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘না। তার দরকারই বা কী? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে তথ্যটা মুখস্থ করে মস্তিষ্ক খরচ করবেন কেন?’
৯. ১৯৩১ সালে চার্লি চাপলিন আমন্ত্রণ জানালেন আইনস্টাইনকে। তখন সিটি লাইটস সিনেমার স্কিনিং চলছিল চাপলিনের। তো যখন চাপলিন ও আইনস্টাইনশহরের পথ ধরে যাচ্ছিলেন, অনেক মানুষ ভিড় জমায়। চাপলিন আইনস্টাইনকে বললেন,‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে। এজন্যই আমার যত জনপ্রিয়তা। তা আপনাকে মানুষ এত পছন্দ করে কেন, বলতে পারেন?’ ‘আসলে’, আইনস্টাইন বলছেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতেই পারে না বলে আমাকে এত বেশি পছন্দ করে!’
১০. স্বামী সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল আইনস্টাইনের স্ত্রীর? তাঁর স্ত্রীকেএকবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কি বুঝতে পারেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘না, কিন্তু আমার স্বামীকে বুঝি। আমি জানি, তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।’
১১. বিখ্যাত ভাষ্কর জেকব এপস্টিন একবার আইনস্টাইনের একটি আবক্ষ মূর্তি খোদাই করছিলেন। আইনস্টাইন নিজেই মডেল হয়ে ধৈর্য ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে শিল্পীকে সাহায্য করতেন। সে সময় একদিন তিনি জেকবকে বলেন,’’ প্রায় শ’খানেক বিজ্ঞানী বই লিখে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আমার থিওরী যদি ভুল হয়, তবে এতজনের দরকারটা কী? একজন বললেই যথেষ্ট।
১২. একবার বেলজিয়ামের রাণী আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর দেশ সফরের। নির্দিষ্ট দিনে আইনস্টাইনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রেল স্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু কোথায় কী? রেল স্টেশনে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ফিরে চলল গাড়্রির বহর রাজপ্রাসাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাণী ব্যাপারটাতে লজ্জিত হলেন। সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করে জানালেন যে, বিজ্ঞানীকে নিয়ে আসার জন্য গাড়ি বহর রেল স্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে। আইনস্টাইন বললেন,’’আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। আর পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি আপনার ঐ রাজকীয় গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখে নিতে পারতাম?’’ এমনই সহজ সরল আর সাধারণ ছিলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। এত বড় বিজ্ঞানী অথচ মনে এতটুকু অহংকার ছিল না।
১৩. আইনস্টাইন যে কত সহজ সরল ছিলেন তা বোঝা যায় তাঁর আরেকটি মজার ঘটনায়। আপেক্ষিকতা তত্ব আবিষ্কার করে তিনি তখন বিখ্যাত ও বিতর্কিত। সত্যি কথা বলতে কি, বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী কারোর মগজের এন্টেনাই ব্যাপারটা ক্যাচ করতে পারছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উদ্ভাবিত তত্ত্বটি বোঝাতে লেকচার দিতে যেতেন। প্রায় সব সেমিনারে তিনি একই ধরনের আলোচনা করতেন। একবার এমনি এক সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন, লেকচার দেবার জন্য। পথিমধ্যে তাঁর ড্রাইভার করে বসল এক আজব আবদার।বলল, ‘’স্যার, আপনার লেকচারগুলু শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আজ একদিনের জন্য আমি আইনস্টাইন সেজে সেমিনারে বক্তব্য চাই।‘’ মজার মানুষ আইনস্টাইনেরও কথাটা খুব মনে ধরল। তিনি এক কথায় রাজি। দেখাই যাক না, ব্যাপারটা কী হয়? তো, ড্রাইভার আইনস্টাইন সেজে অনুষ্ঠানে গেল বক্তব্য দিতে আর স্বয়ং আইনস্টাইন দর্শক সারিতে বসে রইলেন আইনস্টাইনেরই ড্রাইভার হয়ে। তখন তো আর মিডিয়ার এত দৌরাত্ন্য ছিল না। তাই ব্যপারটা কেউ বুঝতে পারল না। আইনস্টাইনরূপী ড্রাইভার মঞ্চে বক্তব্য রাখল এবং চমৎকার বক্তব্য রাখল।দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ আইনস্টাইন বার বার হাত তালি দিতে লাগলেন।অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত একজন আইনস্টাইনের ড্রাইভারের কাছে যেয়ে বললেন, ‘’ আপনার বক্তব্যটি আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু কি জানেন, আমি এই অমুক অমুক বিষয়গুলু একদম বুঝতে পারিনি। আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে বিষয়গুলু বুঝিয়ে দেবেন?’’ আইনস্টাইনের ড্রাইভার বিন্দু মাত্র না ঘাবড়ে উত্তর দিল,’’ওহ! এই ব্যাপার? এই ব্যাপারটা তো আমার ড্রাইভারই বুঝিয়ে দিতে পারবে। চলুন তার কাছেই যাই।
১৪. একবার আইনস্টাইনকে সফলতা লাভের একটি গাণিতিক ফর্মুলা দিতে বলা হল। তিনি বলেছিলেন,’’ X+Y+Z=A, যেখানে X=কাজ, Y=খেলাধুলা আর A=সফলতা।‘’ ‘’আর মানে Z কী?’’ আবারও জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে। ‘’তোমার মুখ বন্ধ রাখা‘’, আইনস্টাইনের উত্তর।
১৫. আইনস্টাইন তাঁর জটিল আপেক্ষিকতার তত্ত্বের একটি সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঠিক এইভাবে,’’যখন তুমি একজন সুন্দরী মহিলার পাশে বসে থাকো তখন দু’ঘণ্টাকে মনে হয় দু’ মিনিট; আর যখন তুমি দু’ মিনিট গরম চুলার পাশে বসে থাকো তখন দু’মিনিটকে মনে হয় দু ঘণ্টা। এটাই হল আপেক্ষিকতাবাদ।‘’ আর রেডিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘’তুমি টেলিগ্রাফের তার দেখেছ। মনে করো, এটা লম্বা, অনেক লম্বা একটা বিড়াল।তুমি নিউইয়র্কে বসে এর লেজে টান দেবে, ওদিকে লস এঞ্জেলেসে এর মাথা মিউ মিউ করে উঠবে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছ? বেতার ঠিক এভাবেই কাজ করে। তুমি এদিকে ইশারা দাও, ওদিকে সাড়া পড়ে। পার্থক্য হল এই বেতারের ক্ষেত্রে বিড়াল বলে কিছু উপস্থিত নেই।
১৬. এত সুন্দর ব্যাখ্যা যিনি দিতে পারেন, তিনি কিন্তু অনেক সময় জীবনের সহজ ব্যাপারগুলো বুঝতে পারতেন না। একবার আইনস্টাইন বাড়ি বানালেন। একদিন তিনি বাড়িটা কেমন হল তা দেখতে গেলেন। ঘুরে ঘুরে সব দেখে তিনি জানতে চাইলেন, তাঁর ছোট্ট বিড়ালছানাটি ঘরে ঢুকবে কি করে? তার জন্য তো কোন আলাদা ছোট দরজা বানানো হয় নি। আসলে যাঁরা অনেক বড় মানুষ, তাঁরা সব সময় বড় বড় চিন্তায় মগ্ন থাকেন তো, তাই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো তাঁরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও এই ছোট্ট ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারলেন না।অবশেষে তাঁকে খুশি করার জন্য বড় দরজার পাশে আরেকটি ছোট দরজা তৈরি করে দেওয়া হল, যেন তাঁর আদরের বেড়ালছানাটি নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বেড়ালছানাটি কোন দরজা ব্যবহার করত তা আইনস্টাইনই ভাল বলতে পারবেন।
১৭. গুজব আছে, সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনেরো আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাই একদিন মনেরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এইভাবে, ‘’চলুন না, আমরা বিয়ে করে ফেলি? তাহলে আমাদের সন্তানেরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওরা দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত।‘’ আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ বললেন, ‘’আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত?‘’ এর উত্তরে মনেরো কী বলেছিলেন তা অবশ্য আমি অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারিনি।
১৮. তিন হাজার শব্দের মধ্যে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব যে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। ‘বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই অংশ নিইনি। আমার বিশ্বাস হয়নি তিন হাজার শব্দে এটা ভালো বোঝাতে পারতাম আমি’−মন্তব্য করেন আইনস্টাইন।
১৯. কাজে যাওয়ার আগে প্রায়ই ভালো পোশাক পরে যাওয়ার আইনস্টাইনকে অনুরোধ-উপরোধ করতেন তাঁর স্ত্রী। বেশির ভাগ সময়ই তিনি জবাব দিতেন, ‘আমি কেন এটা করব? সেখানে সবাই আমাকে চেনে।’ তারপর আইনস্টাইনের প্রথম বড় ধরনের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখন আবার তাঁকে একটু ভালো কাপড়চোপড় পরে সেখানে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন তাঁর স্ত্রী। এবার তিনি জবাব দিলেন, ‘কেন আমি এটা করব? সেখানে কেউই তো আমাকে চেনে না।’
২০. ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটনে পৌঁছানোর পর গবেষণার জন্য তাঁর কী কী প্রয়োজন হবে জিজ্ঞেস করা হলে আইনস্টাইন জানালেন, ‘একটি ডেস্ক, কিছু প্যাড, একটা পেন্সিল আর সব শেষে আমার ভুলগুলো ফেলার জন্য বিশাল একটা ময়লার ঝুড়ি।
২১. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।
২২. অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চমৎকার এক বুদ্ধি বের করেন আইনস্টাইন। বাড়িতে কেউ আসার কিছু সময় পরই এক বাটি স্যুপ নিয়ে কামরায় ঢোকে এক গৃহপরিচারক। যদি তিনি এটা গ্রহণ করেন, তবে অতিথি ধরে নেন তিনি এখন খাবেন এবং মানে মানে কেটে পড়াই তাঁর জন্য শ্রেয়। অন্যদিকে আইনস্টাইনের যদি কথা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, তবে স্যুপটা এক পাশে সরিয়ে দেন, যেন- বা এটা এখানে ছিলই না।
২৩. ১৯৩০ সালে আমেরিকার উদ্দেশে বার্লিন ত্যাগ করেন আইনস্টাইন। বার্লিন রেলস্টেশনে পৌঁছেই স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। যা হোক, একসময় খুঁজে পেলেন তাঁকে। তারপরই টিকিট জোড়া হারিয়ে বসলেন। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল তাও, আর এভাবেই শুরু হলো তাঁর দ্বিতীয় আমেরিকা যাত্রা।
২৪. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।
২৫. ভবিষ্যতে কী আছে? আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে একবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কখনোই চিন্তা করি না। কারণ, এটা এমনিতেও তাড়াতাড়িই আসে।
২৬. বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অন্যতম আলবার্ট আইনস্টাইন। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (The Theory of Relativity) আবিষ্কারের জন্য তিনি আমাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। মজার ব্যাপার তিনি কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পাননি। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী তাঁর এই তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। কেউ যদি এই আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি পড়ে বলে, ‘’বুঝেছি’’ তাহলে নাকি বুঝতে হবে যে, সে কিছুই বুঝেনি। তত্ত্বটি এত গোলমেলে যে, এটি না বোঝাই স্বাভাবিক, বুঝতে পারাটাই যেন অস্বাভাবিক। আর তাই হয়ত রয়েল সুইডিশ একাডেমির জুরিবোর্ড আইন্সটাইনের তত্ত্বটির নিগূঢ় অর্থটি বুঝাতে পারেনি। তাই সে বছর নোবেল পুরষ্কার আইনস্টাইনের কপালে না জুটলেও ১৯২১ সালে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া (Photo Electric Effect) ব্যাখ্যা করে, তিনি পেলেন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার।
২৭. এক পার্টিতে আইনস্টাইনকে চিনতে না পেরে এক তরুণী প্রশ্ন করলেন, আপনি কি করেন?
আইনস্টাইন উত্তর দিলেন, আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র।
তরুণী অবাক হয়ে বললেন, আপনি এখনও ছাত্র! আর আমি গত বছর পাশ করেছি..

২৮. আইনস্টাইন এর মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উনি উনার মেয়েকে বললেন তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাবে আমার কলমটা রেখে আসতাছি। মেয়ে অনেক বারন করা সত্বেও উনি গেলেন, ৩০ মিনিটের কথা বলে উনি যখন না এলেন তখন সবাই মিলে উনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ৭ দিন পর উনার মেয়ে যখন বাসায় এসে মাকে জিজ্ঞাস করলো বাবা কোথায় তখন তার মা বলল ওই যে গেল আর আসে নাই। তখন উনি আইনস্টাইন এর খোজে ল্যাবে গেল। ল্যাবে গিয়ে দেখল যে তার বাবা একটা কলম নিয়ে বোর্ড এর সামনে গিয়ে কি জানি চিন্তা করছিল। মেয়ে বাবা কে বলল বাবা কি কর। তখন উনি বলল যে মা তুমি চার্চে যাও আমি এই কাজ টা ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে আসছি।
২৯. স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন য়খন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, তখন তিনি একদিন বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় একটি ট্যাক্সিতে উঠে বসলেন। গাড়ীর চালকটি তাঁকে চিনতে পারেনি।
ড্রাইভারঃ স্যার কোথায় যাবেন?
স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন এতো মগ্ন থাকতেন যে মাঝে মাঝে তার নিজের নামটাও ভুলে যেতেন। 
ড্রাইভারের প্রশ্নে তিনি চিন্তিত হয়ে পরলেন কারন তিনি তার নিজের বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছেন।
তিনি ড্রাইভারকে বললেনঃ “তুমি আইনস্টাইন এর বাড়ী চিন?”
কারণ তখন আলবার্ট আইনস্টাইন এর বাড়ী সবাই তখন চিনত।
ড্রাইভারঃ হ্যাঁ স্যার, চিনি।
আইনস্টাইনঃ তাহলে চল।
ড্রাইভারঃ “আপনি কি তার সঙ্গে দেখা করতে চান? ”
আইনস্টাইনঃ “না আমিই আইনস্টাইন। আমি আমার বাসার ঠিকানা ভুলে গেছি আপনি আমাকে সেখানে নিতে পারেন।”
ড্রাইভার তো পুরাই থ! 
ড্রাইভার তাকে বাড়ি পৌঁছে দিল এবং আইনস্টাইন এতোই মনভোলা যে গাড়ী থেকে নেমে ভাড়া দেয়ার কথাও ভুলে গেলেন আর ড্রাইভার হা হরে দারিয়ে থাকলেন কারণ গাড়ী থেকে নামার পর আইনস্টাইন তাকে চিনেনই না।

৩০. আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মত রহস্যময়তার মধ্যেই মৃত্যু ঘটে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের। তাঁর মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর মাতৃভাষা জার্মানে কিছু একটা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তখন তাঁর পাশে থাকা আমেরিকান নার্স কথাটির বিন্দু বিসর্গও বুঝতে পারেনি। মৃত্যুর আগে শেষ কী কথা তিনি বলে গেছেন, তা আমাদের জানা হবে না আর কোন দিন।
আলবার্ট আইনস্টাইনের বেহালা
একটি টেবিল, একটি চেয়ার, এক পাত্র ফল আর একটি বেহালা—একজন মানুষকে সুখী হতে আর কী চাই?’
—আলবার্ট আইনস্টাইন
১৯৫২ সালে ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে অনুরোধ করা হলো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। তিনি সবিনয়ে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দিলেন। তখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর। তিনি আনুষ্ঠানিক প্রত্যাখ্যানপত্রে লিখলেন, ‘যথাযথভাবে মানুষের সঙ্গে মেলামেশার স্বাভাবিক প্রবণতা ও অভিজ্ঞতার অভাব আমার রয়েছে, তা ছাড়া আমি বৃদ্ধও হয়ে যাচ্ছি।’
একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব আইনস্টাইনের পক্ষেই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তিনি যা কখনো ফিরিয়ে দেননি, তা হচ্ছে বেহালা বাজানোর প্রস্তাব। তিনি টানা ৭০ বছর বেহালা বাজিয়ে গেছেন।

আইনস্টাইনের নিজের কথা, ‘আমি খুব সুখী। কারণ, কারও কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। পদক, খেতাব, উপাধি—আমার কাছে এসবের কোনো মানেই নেই। আমি প্রশংসার জন্যও লালায়িত নই। আমার নিজের কাজ ছাড়া একটি মাত্র বিষয় আমাকে আনন্দ দেয়, তা হচ্ছে আমার বেহালা।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ১৯৩০-এর গ্রীষ্মের অপরাহে যখন আইনস্টাইনের দেখা, তখন তাঁদের আলাপের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল সংগীতের কথা। রবীন্দ্রনাথ বললেন, পিয়ানো তাঁকে হতবাক করে আর বেহালা তাঁকে দেয় তৃপ্তি।
আইনস্টাইন বললেন, ব্যক্তির অনুভূতির সঠিক বিকাশ তখনই সম্ভব, যখন সংগীতের সমৃদ্ধ শৈল্পিক ঐতিহ্য মানুষের মনকে চালিয়ে নিয়ে যায়।
আইনস্টাইনের মা পলিন আইনস্টাইন (১৮৫৮-১৯২০) ছিলেন সুশিক্ষিত পিয়ানোবাদক, তিনি চেয়েছেন ছেলেও সংগীত ভালোবাসুক। ছয় বছর বয়সে তিনি ছেলের হাতে বেহালা তুলে দিলেন। কিন্তু তখন বালকের বেহালা ভালো লাগেনি। তখন তাঁর পছন্দ কার্ড দিয়ে ঘর বানানো, জিগসো সমাধান। ১৩ বছর বয়সে যখন তিনি মোৎজার্ট শুনলেন, তাঁর ঘটল ভিন্ন এক উত্তরণ। তিনি আবার বেহালা হাতে নিলেন। হাত থেকে তা আর নামাননি। তিনি নিজের জন্য বেহালা বাজিয়েছেন, বাজিয়েছেন শ্রোতাদের জন্যও।
তাঁর খালাতো বোন ও দ্বিতীয় স্ত্রী এলমা লিখেছেন, ‘আলবার্ট যখন বেহালায় মোৎজার্টের সুর তুলেছে নিপুণ হাতে, আমি তখন ছোট্ট বালিকা, তার প্রেমে পড়ে যাই।’ …আলবার্ট পিয়ানোও বাজাতেন। তিনি যখন বিজ্ঞানের তত্ত্বের কথা ভাবতেন, সংগীত তাঁকে সাহায্য করত। পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ সুর তুলতেন, চিন্তাকে সমন্বিত করে আবার পড়ার ঘরে ফিরে যেতেন।
আইনস্টাইন ১৭তম জন্মদিনে সংগীত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষক মন্তব্য করেন, ‘আইনস্টাইন নামের একজন ছাত্র একাই সংগীতের প্রতি তার গভীর মমত্ব দেখিয়ে বিটোফেনের সোনাটা বাজিয়ে শুনিয়েছে।’ বার্লিন-জীবনে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা তিনি সমানতালে চালিয়ে গেছেন। কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্লাঙ্কের সঙ্গে বেহালা বাজিয়েছেন, ওঠাবসা করেছেন সংগীতগুরু ফ্রিৎজ ক্রিসলার আর আর্তুর শনাবেলের সঙ্গে।
১৯২১-এ যখন আইনস্টাইন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এলেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদকেরা দেখতে পেলেন তাঁদের সামনে আলুথালু চুলের একজন দয়ালু মানুষ, পুরোনো দিনের পোশাক, বেহালার বাক্সটি হাতে; সফরে বের হওয়া পেশাদার শিল্পীরা যেমন করে পৃথিবীকে দেখেন, তিনিও তেমনি পৃথিবীকে দেখছেন।
বিটোফেন শেষ পর্যন্ত আইনস্টাইনকে বেশি টানেনি। তিনি আমৃত্যু মোৎজার্ট-মুগ্ধ ছিলেন, তাঁর প্রিয় অন্য সুরস্রষ্টাদের মধ্যে ছিলেন বাখ, শুবার্ট, ভিভালদি ও কোরেল্লি।
১৯২৯-এ আইনস্টাইন যখন বেলজিয়াম সফরে এলেন, রানি এলিজাবেথ (সাবেক প্রিন্সেস এলিজাবেথ অব বাভারিয়া) তাঁর সঙ্গে বেহালা বাজানোর জন্য বিজ্ঞানীকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। রানির বেহালাবাদনের সুখ্যাতি ছিল। তিনি নেদারল্যান্ডসে অক্সফোর্ডে বেহালা বাজিয়েছেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শরণার্থী সহায়তা তহবিল গড়তে গ্যাবি ক্যাসাডেসাসের সঙ্গে যুগলবন্দী বাজিয়েছেন।
১৯৫৫-এর ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৫৫ প্রিন্সটন সিম্ফনি আইনস্টাইন স্মারক সংগীত বাদনের আয়োজন করে।
আইনস্টাইন বিভিন্ন ধরনের বেহালা বাজিয়েছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একসময় দেখলেন সহজভাবে বাঁ হাত আর তুলতে পারছেন না, তিনি বেহালা রেখে দিলেন। আর হাতে তুলে নেননি।

No comments:

Popular Posts

BANGLA CNN NEWS. Powered by Blogger.